আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মানুষ মারার জম দুরন্ত পরিবহন!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

চাষাড়া টু চিটাগাং রোডের ফিটনেস বিহীন যাত্রী পরিবহন দুরন্তের দুরন্তপনা যেন দিন বেড়েই চলেছে। জানা গেছে মোট ৬২ বাস রয়েছে দুরন্ত পরিবহন কোম্পানীর। কিন্তু একটি বাসেরও নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। তার ওপর প্রত্যেকটি বাসই সম্পূর্ণ ফিটনেস বিহীন। হাতেগোনা ৪/৫ টি ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও বাকি বাসগুলো চালাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হেলপাররা। ফিটনেস বিহীন লক্কর ঝক্কর বাস হওয়ায় এবং কোন রুট পারমিট না থাকায় কোন লাইসেন্সধারী ড্রাইভার দুরন্ত পরিবহন চালাতে অগ্রহী হয়না বলে অপ্রপ্ত বয়স্ক হেলপারদের মাধ্যমেই চলছে দুরন্ত। যাদের অধিকাংশই আবার মাদকাশক্ত। যার ফলে ইতিপূর্বে দুরন্ত কেড়ে নিয়েছে অনেক সাধারন মানুষের প্রাণ।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো চাষাড়া-টু-চিটাগাং রোডে চলাচলের কোন রুট পারমিট নেই দুরন্ত কর্তৃপক্ষের। তবুও রহস্যজনক ভাবেই এ রুট দিয়ে চলছে চাষাড়ার যানজটের অন্যতম হোতা এই দুরন্ত পরিবহন।

এ বিষয়ে জানতে রমজান মোল্লার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করলে ভুল নাম্বার বলে ফোন রেখে দেয় একজন।

দুরন্ত পরিবহনের চাষাড়া স্ট্যান্ড এর আশেপাশের কয়েকজ জানান, কখনো যদি ম্যাজিস্ট্রেট ফিটনেস বিহীন গাড়ির ওপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে আসে তাহলে আর খুঁজে পাওয়া যায়না দুরন্ত পরিবহনের একটি বাসও। উধাও হয়ে যায় বাসগুলো। আবার ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলে পুনরায় আবারে চলাচল করে তারা।

এদিকে, দুরন্ত পরিবহনের কয়েক জন যাত্রীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সিটিং ভাড়া নিয়ে সম্পূর্ণ বাসে দাড়া করিয়ে যাত্রী নিয়ে আসে এই লক্কর ঝক্কর দুরন্তবাস, কিন্তু বিকল্প কোন ভালো পরিবহন না থাকায় এই ভাঙা বাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালাচল করতে হচ্ছে তাদের।

এসময়, দুরন্ত পরিবহনে প্রতিদিন চলাচল করে এমন কয়েকজন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী নিজ থেকেই এ প্রতিনিধিকে এসে বলেন- এই মরন ঘাতি বাস যদি এখনি বন্ধ না করা হয়, তাহলে সামনে মিরপুর থেকেও ভয়াবহ দুর্ঘটনা হতে পারে। এসময় সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানসহ জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানায় তাদের জীবন এই লক্কর জক্কর পরিবহণের হাত থেকে বাঁচাতে।

যাত্রীদের আরো অভিযোগ, দুরন্ত পরিবহন মানুষ মারার জমে পরিনত হয়েছে। এ পরিবহনের গাড়ী গুলোর মান খুবই খারাপ। একদিকে ফিটনেসহীন অপরদিকে অদক্ষ চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ী চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে জীবন দিতে হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীদের। লক্কর-ঝক্কর এসব গাড়ী যেখানে সেখানেই বিকল হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরেক দিকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তাছাড়া এ পরিবহন সিটিং সার্ভিস হিসেবে ভাড়া আদায় করলেও যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা-নামা করছে। এতে ভাড়া নিয়েও যাত্রীদের সাথে চালক-হেলপারদের বাক-বিতন্ডা হচ্ছে। ১২ সিটের গাড়ীকে বানানো হয়েছে ২৫ সিটের। সিটিং সার্ভিস বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেও যাত্রীদের আসা যাওয়া করতে হচ্ছে দাঁড়িয়ে। নিয়ম বহিঃর্ভূত সিট বৃদ্ধি করার কারণে যাত্রীদের বসতে অসুবিধা হচ্ছে।

দু’জনের সিটে ৩ জন বসতে বাধ্য করা হচ্ছে। চালক হেলপাররা অতিরিক্ত আয় করতে যাত্রী দুর্ভোগের পন্থাবলম্বন করছে। দুরন্ত পরিবহন মানুষ মারার জম জেনেও বিকল্প ভালো কোন পরিবহন না থাকায় প্রয়োজনের তাগিদে যাত্রীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে নিরুপায় হয়ে। এত অনিয়ম থাকার পরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা বলে যাত্রীসাধরণের অভিযোগ।

শুধু তাই নয়, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ থাকলেও তারা সে আইন মানছে না। এক হাতে ড্রাইভিং হুইল ধরে আরেক হাতে মোবাইল ফোন কানে ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। যাত্রীরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো যাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণে লিপ্ত হচ্ছে চালকেরা। পাশাপাশি চালকেরা নিজস্ব বন্ধুবান্ধ নিজেদের পাশে বসিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে গাড়ি চালিয়ে থাকে। যার জন্য দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। এ থেকে মুক্তি চাই নগরবাসি। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।